10th Oct 2024
প্রতিবেদন
নিজস্ব প্রতিনিধি
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র নাকি কোনও এক সভাসদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, সব জায়গায় তো মায়ের মৃন্ময়ী রূপ দেখি, কোথায় গেলে চিন্ময়ী রূপ দেখতে পাব? পরে সেই সভাসদের মুখে রানাঘাটের বুড়োমার পুজোর কথা শুনেই ছুটে এসেছিলেন নদীয়ার অধিপতি। রানাঘাটের শর্মা বাড়ির পুজো তাই কেবল মাতৃ আরাধনাই নয়, জেলার ইতিহাসের একটি অধ্যায়ও। তল্লাটের প্রাচীনতম পুজো বলতে এটাই।
শর্মা বাড়ির দুর্গাপুজো বুড়ো মা নামে খ্যাত। ৭৬০ বছরের প্রাচীন পুজো। ১২৬২ খ্রিস্টাব্দে এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন রামকুমার চক্রবর্তী। কথিত আছে মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে পাঁচ বাড়ি ভিক্ষা করে রানাঘাটে দুর্গা পুজো করেন তিনি। সেই থেকেই মা দুর্গা রানাঘাটে বুড়ো মা নামে পূজিত হয়ে আসছেন। শোনা যায়, নদীয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতায় এই পুজো ব্যপ্তি লাভ করে। উল্টোরথের দিন পাটে সিঁদুর দিয়ে দেবী প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। চতুর্থীতে পাটে ওঠেন বুড়ো মা। পঞ্চমীতে মাকে গহনা পরানোর পর ষষ্ঠী থেকে শুরু হয় পুরোদমে পুজো। নয় রকমের ভাজার সঙ্গে প্রতিদিনই মাকে নিবেদন করা হয় বিভিন্ন রকমের ভোগ। রাজ্যের প্রাচীন পুজো বলে আখ্যা দেওয়াই যায়। প্রাচীন প্রথা মেনে অহংকার নিবৃত্ত করার জন্য নবমীর দিন হয় কাদা খেলা। দশমীর দিন প্রান্ত ভোগ, কচুর শাক আর কলার বড়া খেয়ে বুড়ো মা এক বছরের জন্য বিদায় নেন।
শর্মাবাড়ির ব্যতিক্রমী কিছু নিয়মনীতির মধ্যে অন্যতম হল কাদামাটির খেলা। নবমীতে শর্মা বাড়ির ঠাকুরদালান ছাড়াও রানাঘাটের ঘোষ বাড়ি, পালবাড়ি, কাঁসারি বাড়ি এবং একটি বারোয়ারি পুজোয় কাদামাটি খেলতে যান পরিবারের বর্তমান প্রজন্মরা। পরিবারের সদস্য সৌরভ শর্মা চৌধুরী বলেন, প্রথম পুজোয় যে ছাঁচ ব্যবহার করে ঠাকুর তৈরি হয়েছিল, আজও সেই ছাঁচেই তৈরি হয় বুড়োমা। একটি প্রাচীন তালপাতার পুঁথি রয়েছে আমাদের। সেই পুঁথির উপর নির্ভর করেই এই পুজো। শোনা যায়, এটিও নাকি প্রায় সাত শতাধিক বছরের প্রাচীন।