5th Feb 2025

Highlights :

www.rojkarananya.com news

অরণ্যে জলের গন্ধ

14th Dec 2024

ভ্রমণ

কমলেন্দু সরকার


রূপমাধুরীর ভেলকি ভালকির জঙ্গলে! হাত বেড়ালেই এমন মনহরা এক জঙ্গলে পৌঁছানো যায়, যাঁরা গেছেন তাঁরা ছাড়া আর কেউ বিশ্বাস করবেন বলে মনে হয় না! নীল আকাশে ভাসে সাদা মেঘের ভেলা। নীচে শাল, পিয়াল, পলাশের রাজ্য। শীতে সোনাঝুরি ফুল। আদিগন্ত বিস্তৃত ফসলের খেত। ঢালা লালমাটির রাস্তা। সবমিলিয়ে ভালকির ভেলকিতে দৃষ্টিতে থমকে যায়! কলকাতার কাছেই ছিমছাম এক অরণ্যের সঙ্গে সখ্য করা যায় তা অনেকেরই হয়তো অজানা। তাই জানলে খারাপ লাগবে না। তাই এবারের শীতে কাছেপিঠে বেড়ানোর ঠিকানা হোক ভালকি মাচান। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে দুদিন হারিয়ে যেতে মন্দ লাগবে না। বরং বেশ নিশ্চিন্তিই লাগবে।

ডালকির শাল-পলাশের জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে বিশাল উঁচু কটি পুরোনো অন্ধ, যার পরিচিতি মাচান। সবমিলিয়ে ভালকিমাচান। মাচানের কাছেই ছোট এক জলাশয়। মনে হয়, এই জলাশয়ে জল খেতে আসত বন্যজন্তুর দল। সেইসময় তারা শিকারির খপ্পরে পড়ত। শিকারের উদ্দেশে অতীতে তৈরি হয়েছিল মাচানগুলো। একসময় নাকি প্রচুর ভালুক ছিল এই জঙ্গলে। দলমা থেকে অরণ্যের পথ ধরে নেমে আসত হাতির পাল। এখন কিছুই নেই। তবে স্থানীয়েরা বলেন, এই জঙ্গলে এখন আছে বনবিড়াল, শিয়াল, বাঁদর, বুনোশুয়োর। আর আছে বহুরকম পাখি আর প্রজাপতি। ভালকিমাচানে যাওয়ার পথটি একেবারে ছবির মতো সুন্দর। নীল আকাশ, নির্জন অরণ্য, বাতাসে পাতা খসার শব্দ, পাখির ডাক শোনা আর আদিবাসী গ্রামের মজা নেওয়ার জন্য কোনও বিকল্প নেই ভালকি মাচানের। তার ওপর যখন দূর থেকে কানে আসে মাদলের আওয়াজ তখন মনে হয় এ যেন মুক্ত জীবনের সুর। মাদলের সুরে দুলে ওঠে অরণ্য, দোল খায় খেতের ফসলও। কোলাহল মুক্ত এমন জায়গা দুটি চোখে পড়েনি হাতের কাছে।

যদি নিবিড় আরণ্যকে রোম্যান্টিক পরিবেশে চান তাহলে জ্যোৎস্না ভরা রাতে আসতেই হবে ভালকি মাচান। পূর্ণিমার কামরাঙা জ্যোৎস্নায় ভেসে যায় ভালকি মাচানের অরণ্য। কাঁসার থালার চাঁদ দাঁড়িয়ে থাকে অরণ্যের গাছগাছালির মাথায়। মনে হবে, টুক করে যদি পেড়ে নেওয়া যেত। তা তো হয় না। কল্পনা থেকে যায় মনের ভিতর। তাই ভেসে যেতে ভরা জ্যোৎস্নার অরণ্যে। অমাবস্যার রাতে আবার অন্য মজা। অন্ধকারে একধরনের আনন্দ থাকে, ভাল লাগা থাকে, সেইসবই পাওয়া যায় অমাবস্যার রাতে। এক, দুই, তিন... গুনতে গুনতে তারা গোনা এ এক খেলা ভালকি মাচানে অমাবস্যার রাতে। ভোরের ভালকি মাচানের আবার অন্য সৌন্দর্য, অন্য মজা! জঙ্গলের পথে হটিতে ভীষণই ভাল লাগে। ঘণ্টির টুং টাং শব্দ, পাখির কলতান আর শীতের কুয়াশা মোড়া সৌন্দর্য, মন ভাল করে দেবে। দূরে দেখলেন বাঁকে করে খেজুর রস নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁকে ডেকে জমিয়ে খেজুর রসও খেতে পারবেন। এ হল ডাবল মজা। এ মজার ভাগ হবে না। তবে, গেস্ট হাউসে বললেও ওঁরা ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ নাকে আসে জলের গন্ধ। অরণ্যে জলের গন্ধ। কেন? আসলে, ভালকি মাচান জঙ্গলের কাছেই রয়েছে যমুনাদিঘি। তাই অরণ্য বাতাসে ভেসে আসে জলের গন্ধ। জলের একট গন্ধ আছে যা জাদুর মতো টানে। তাই ভালকি ছেড়ে যমুনাদিঘিতে চুঁ না-মেয়ে আর থাকা যায় না। থাকবার জায়গাটির নাম আম্রপালি গেস্ট হাউস। বিশেষ একটি আমের নামে নামকরণ। হবে নাই বা কেন, যমুনাদিঘিতে প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির দুশোর মতো আম গাছ রয়েছে। এছাড়াও আছে বহুরকম ফাদ গাছ। গাছগাছালি ঘেরা যমুনাদিঘিতে জলাশয় আছে ৪৪-৪৫টি। আগে বেটি করার ব্যবস্থা ছিল, বর্তমানে নেই। একটি জলাশয়ের ওপরে রয়েছে থাকবার জন্য দুটি এসি রুম। ভার ১৪০০ টাকা। সেখানে চা, কফি বা খাবয় খেতে খেতে নিরালায় সময় কাটে ভাল। ঘুরে বেড়ানো যায় জলাশয়ের ধারে ধারে। চাঁদনি রাতে জলাশয় অর গাছগাছালির মিলনে অপূর্ব এক পরিবেশ তৈরি হয় যমুনাদিঘিতে। ভালকিমাচান জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে আসুন। খারাপ লাগবে না।

কীভাবে যাবেন: শান্তিনিকেতন যাওয়ার পথে বর্ধমানের পরেই গুসকরা। এখনে নেমে গাড়িতে। মানকর স্টেশন যেয়েও যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে সরাস গাড়িতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে বর্ধমানের পারাজ রেলওয়ে স্টেশন মোড় থেকে ডান দিকে অভিরামপুর হয়ে সোজা ভালকি মাচান। পারাজ। থেকে মাত্র ১৬ কিমি। কলকাতা থেকে দূরত্ব কমবেশি ১৫০ কিমি।

কোথায় থাকবেন: অরণ্য সুন্দরী, ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা। প্রাতঃরাশ থেকে রাতের খাবার ৪৫০ টাকা। যোগাযোগ: 09153420133.

যমুনাদিঘিতে থাকবেন আম্রপালি গেস্টহাউসে। ভাড়া- ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকা। সঙ্গে যোগ হবে ১২% জিএসটি। খাওয়াদাওয়া যেমন খাবেন তেমন। যোগাযোগ: 07908040694.

Archive

Most Popular

আপেলের বীজ

5th Feb 2025

সাহিত্য

রজতশুভ্র মজুমদার

Read More
সিজন চেঞ্জের সমস্যা থেকে কীভাবে ভালো রাখবেন নিজের বাড়ির খুদে সদস্যটিকে কে?

5th Feb 2025

স্বাস্থ্য

সুদেষ্ণা ঘোষ

Read More